আহ, স্মার্টফোন! আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তাই না? কিন্তু মাঝে মাঝে যখন চার্জে বসাই আর দেখি ফোনটা গরমে রীতিমতো ঝলসে যাচ্ছে, তখন কেমন লাগে বলুন তো?

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই সমস্যাটা নিয়ে আমরা অনেকেই বেশ চিন্তিত থাকি। আজকাল ফাস্ট চার্জিংয়ের যুগে ফোন দ্রুত চার্জ হয় ঠিকই, কিন্তু এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অতিরিক্ত গরম হওয়ার প্রবণতা। ভাবুন তো, আপনার শখের ফোনটা যদি এই গরমে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে, ব্যাটারি লাইফ কমে যায়, অথবা এর থেকেও বড় কোনো বিপদ হয়, তাহলে কতটা মন খারাপ হবে!
তাই এই গরমে আপনার প্রিয় স্মার্টফোনকে কিভাবে ঠান্ডা রাখবেন এবং চার্জিংয়ের সময় অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন ঠেকাবেন, সেই সব জরুরি বিষয় নিয়েই আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আপনার ফোনের এই গরম হওয়ার পেছনের আসল কারণগুলো এবং এর কার্যকরী সমাধান।
কেন আপনার ফোন চার্জের সময় উষ্ণ হয়ে ওঠে: ভেতরের গল্প
স্মার্টফোন চার্জ করার সময় গরম হওয়াটা কিন্তু একদম স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমার ফোন ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টে চার্জ দেই, তখন অন্যান্য সাধারণ চার্জারের তুলনায় এটি একটু বেশিই উষ্ণ হয়। এর কারণ হলো, যখন ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তখন তাপ সৃষ্টি হয়। তবে, অতিরিক্ত গরম হওয়াটা কিন্তু সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। ভাবুন, আপনার শরীরের তাপমাত্রা যদি হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়, তখন যেমন অসুস্থ লাগে, ফোনেরও ঠিক তেমনটা হয়। এটা শুধু ব্যাটারির আয়ু কমায় না, মাঝে মাঝে ফোন বিস্ফোরণের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়!
ফাস্ট চার্জিংয়ের প্রভাব
আজকাল সব ফোনেই প্রায় ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি থাকে। এটা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই দ্রুত চার্জ হওয়ার প্রক্রিয়াতে ব্যাটারি আরও বেশি চাপ নেয়, যার ফলে তাপ উৎপাদনও বেড়ে যায়। আমার নিজের ফোন, যেটা ৩৩W ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে, চার্জ হওয়ার সময় বেশ গরম হয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি দেখেন ফোন অস্বাভাবিকভাবে গরম হচ্ছে, তাহলে সতর্ক হতে হবে।
হার্ডওয়্যার এবং ব্যাটারির ভূমিকা
স্মার্টফোনের ব্যাটারি, বিশেষ করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, যখন চার্জ নেয় বা ডিসচার্জ হয়, তখন কিছুটা তাপ উৎপন্ন করে। এছাড়া, ফোনের প্রসেসরও সব সময় কাজ করে, এমনকি যখন আমরা ফোন ব্যবহার করি না তখনও। এই প্রসেসর গরম হলে সেই তাপ ফোনের বডির মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছায়। ফোন যত পাতলা হচ্ছে, ব্যাটারি বা প্রসেসরের তাপ বের হওয়ার জায়গা তত কমে আসছে। পুরনো বা দুর্বল ব্যাটারিও তাপ উৎপাদনের বড় কারণ হতে পারে। আমার একটা পুরনো ফোন ছিল, সেটার ব্যাটারি ফুলে গিয়েছিল এবং চার্জ দিলেই খুব দ্রুত গরম হয়ে যেত। পরে ব্যাটারি বদলে ফেলার পর সমস্যাটা অনেকটাই কমে এসেছিল।
ভুল চার্জিং অভ্যাস: অজান্তেই আমরা যে ভুলগুলো করে ফেলি
আমরা প্রায়শই অজান্তেই এমন কিছু ভুল করি, যা আমাদের স্মার্টফোনকে আরও বেশি গরম করে তোলে। আমার মনে আছে, একবার আমি রাতে ঘুমানোর আগে ফোন চার্জে দিয়ে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি ফোনটা রীতিমতো আগুন গরম!
এমন ছোট ছোট ভুলগুলোই কিন্তু ব্যাটারির ক্ষতি করে এবং ফোনের আয়ু কমিয়ে দেয়।
সারারাত চার্জে রাখা এবং অতিরিক্ত চার্জিং
অনেকেই আমরা রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ফোন ১০০% চার্জ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ চার্জারে যুক্ত থাকলে ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে, যা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফোনকে ২০% থেকে ৮০% চার্জের মধ্যে রাখলে ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়ে। আমার মনে হয়, এই অভ্যাসটা রপ্ত করতে পারলে ব্যাটারির স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে।
অরিজিনাল চার্জার ব্যবহারের গুরুত্ব
নকল বা নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার করলে ফোনের ব্যাটারির অনেক ক্ষতি হয়। এসব চার্জার সঠিক ভোল্টেজ দিতে পারে না, যার ফলে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয় এবং এর অভ্যন্তরীণ ক্ষতি হতে পারে। আমি সবসময় অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করার পরামর্শ দেব। আমার এক বন্ধু একবার সস্তা একটা চার্জার ব্যবহার করে তার ফোনের ব্যাটারি নষ্ট করে ফেলেছিল। এমন ভুল যেন আমরা কেউ না করি।
ফোনকে ঠান্ডা রাখার স্মার্ট উপায়
আপনার ফোনকে ঠান্ডা রাখতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী উপায় আছে, যা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাতেও দারুণ কাজ দিয়েছে। এগুলো মেনে চললে আপনার ফোন যেমন দীর্ঘস্থায়ী হবে, তেমনি আপনিও নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
চার্জিংয়ের সময় ফোনের কভার খুলে রাখুন
আমরা অনেকেই ফোনের সুরক্ষার জন্য মোটা কভার ব্যবহার করি। কিন্তু চার্জ দেওয়ার সময় এই কভারগুলো ফোনের তাপ বের হতে বাধা দেয়, ফলে ফোন আরও গরম হয়ে ওঠে। যখনই ফোন চার্জে বসাবেন, কভারটা খুলে রাখুন। এতে বায়ু চলাচল ভালো হয় এবং ফোন দ্রুত ঠান্ডা হয়। আমি নিজে যখন গেম খেলি বা ফোন চার্জ দেই, তখন কভারটা খুলে ফ্যান বা এসির নিচে রাখি, এতে ফোন অনেক ঠান্ডা থাকে।
সঠিক চার্জিং পরিবেশ নিশ্চিত করুন
ফোন চার্জ দেওয়ার সময় শক্ত ও ঠান্ডা জায়গায় রাখুন। সোফা, বিছানা বা বালিশের মতো নরম পৃষ্ঠে চার্জ দিলে তাপ আটকে যায় এবং ফোন অতিরিক্ত গরম হয়। আমি সবসময় আমার ফোনটা টেবিলের উপর বা শক্ত মেঝের উপর রেখে চার্জ দেই। সরাসরি সূর্যের আলোতে বা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ফোন রাখা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ফোনের তাপমাত্রা ১০°C পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
ব্যাটারির যত্ন: দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্সের জন্য জরুরি পদক্ষেপ
ব্যাটারি আমাদের স্মার্টফোনের প্রাণ। এর সঠিক যত্ন নিতে পারলে ফোনের আয়ুও বাড়ে আর পারফরম্যান্সও থাকে দারুণ। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু অভ্যাস মেনে চলি, যা আমার ফোনের ব্যাটারিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ব্যাটারি সেভার মোড এবং ডার্ক মোড ব্যবহার করুন
প্রায় সব স্মার্টফোনেই ব্যাটারি সেভার বা পাওয়ার সেভিং মোড থাকে। এটি চালু করলে ফোনের প্রসেসরের গতি কমে, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয় এবং স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমে যায়, ফলে ব্যাটারির খরচ কম হয়। এছাড়াও, AMOLED স্ক্রিনের ফোনে ডার্ক মোড ব্যবহার করলে ৩০% পর্যন্ত শক্তি সাশ্রয় হয়। আমার ফোনে চার্জ কম দেখলেই আমি সাথে সাথে ব্যাটারি সেভার মোড অন করে দেই, এতে বেশ খানিকক্ষণ বেশি সময় পাওয়া যায়।
অ্যাপস ও সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন
সফটওয়্যার এবং অ্যাপস নিয়মিত আপডেট রাখলে অনেক বাগ বা ত্রুটি ঠিক হয়ে যায়, যা ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। পুরাতন ভার্সনে অনেক সময় বেশি চার্জ খরচ হয়। তাই ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপস সবসময় আপডেটেড রাখা উচিত। আমি সবসময় নোটিফিকেশন এলেই আপডেট করে ফেলি, এতে ফোন যেমন মসৃণ চলে তেমনি ব্যাটারির উপর চাপও কম পড়ে।
সফটওয়্যার এবং অ্যাপসের ভূমিকা: গরম হওয়ার পেছনে তাদের হাত কতটা?
আমরা অনেকেই ভাবি ফোন গরম হওয়া মানেই বুঝি হার্ডওয়্যারের সমস্যা। কিন্তু সত্যি বলতে, অনেক সময় সফটওয়্যার এবং কিছু অ্যাপসও ফোনকে গরম করার জন্য দায়ী। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কিছু ভারী অ্যাপ বা গেম খেলার সময় ফোন অনেক গরম হয়ে যায়।
ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করুন
অনেক অ্যাপ আমরা ব্যবহার না করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এবং ফোনের প্রসেসর ব্যবহার করে, যা ফোনকে গরম করে তোলে। Facebook, Messenger, Instagram-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর রিসোর্স নেয়। তাই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বন্ধ করে রাখা উচিত। অ্যান্ড্রয়েডে সেটিংসে গিয়ে অ্যাপস অপশন থেকে ‘Force Stop’ করে দিতে পারেন।
ভারী গেম ও অ্যাপস ব্যবহারের সতর্কতা
উচ্চ গ্রাফিক্সের গেম বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো ভারী অ্যাপস ফোনের প্রসেসরের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ফোন দ্রুত গরম হয়। আমি যখন PUBG-এর মতো গেম খেলি, তখন দেখি ফোন খুব দ্রুত গরম হতে শুরু করে। তাই একটানা দীর্ঘক্ষণ ভারী গেম বা অ্যাপ ব্যবহার না করে কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
অতিরিক্ত গরম হলে কী করবেন? তাৎক্ষণিক সমাধান
মাঝে মাঝে ফোন এতটাই গরম হয়ে যায় যে মনে হয় এক্ষুনি ফেটে যাবে! এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যা আপনার ফোনকে বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। আমার জীবনেও এমন কিছু মুহূর্ত এসেছে, যখন এই টিপসগুলো আমাকে বেশ সাহায্য করেছে।
তাৎক্ষণিক ঠান্ডা করার পদ্ধতি
যদি দেখেন ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে গেছে, তাহলে দ্রুত চার্জার থেকে খুলে ফেলুন। যদি কভার লাগানো থাকে, সেটা খুলে ফেলুন। ফোনটিকে ঠান্ডা, শক্ত কোনো পৃষ্ঠে রাখুন বা ফ্যানের বাতাসে রাখুন। ভুলেও ফ্রিজে বা বরফের কাছে রাখবেন না, কারণ আকস্মিক তাপমাত্রা পরিবর্তনে ফোনের ভেতরে জলীয় বাষ্প জমে শর্ট-সার্কিট হতে পারে। আমি নিজে কখনো কখনো ফ্যানের নিচে কিছুক্ষণ রেখে দেই, এতে দ্রুত ঠান্ডা হয়।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ এবং ফিচার বন্ধ করুন
অতিরিক্ত গরম হলে সব চালু থাকা অ্যাপ বন্ধ করে দিন। লোকেশন, ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই (যদি ব্যবহার না করেন) এবং মোবাইল ডেটা বন্ধ করে দিলে ফোনের প্রসেসরের উপর চাপ কমে। এমনকি কিছু সময়ের জন্য ফোন বন্ধ করে রাখলেও যন্ত্রাংশগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসে।
প্রযুক্তিগত সমাধান এবং ভবিষ্যৎ ভাবনা: কখন বুঝবেন নতুন ফোন দরকার?

আমরা যতই যত্ন নেই না কেন, একটা সময় পর প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। ফোন গরম হওয়া বা ব্যাটারির পারফরম্যান্স কমে যাওয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যখন মনে হয়, এবার বুঝি নতুন ফোনের সময় হয়েছে।
কখন বুঝবেন ফোন বদলানোর সময় হয়েছে?
যদি দেখেন আপনার ফোন প্রায়শই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা রিস্টার্ট নিচ্ছে, ব্যাটারি দ্রুত খরচ হচ্ছে (যেমন ৩০ মিনিটে ২০% চার্জ ড্রপ), স্ক্রিনে অস্বাভাবিক রেখা বা বিবর্ণতা দেখা দিচ্ছে, অথবা ব্যাটারি ফুলে যাচ্ছে বা বডির আকার বিকৃত হয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন বিপদ আসন্ন। বিশেষ করে ফুলে যাওয়া ব্যাটারি কিন্তু আগুন লাগার বা বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে, এমন অবস্থায় দ্রুত সার্ভিস সেন্টারে যাওয়া উচিত।
| পরিস্থিতি | স্বাভাবিক তাপমাত্রা | বিপদসীমা |
|---|---|---|
| সাধারণ ব্যবহার | ৩০°C – ৩৫°C | ৪৫°C+ |
| গেমিং/ভিডিও | ৩৫°C – ৪০°C | ৫০°C+ |
| ফাস্ট চার্জিং | ৪০°C – ৪২°C | ৪৮°C+ |
এই তাপমাত্রা গাইডলাইন (Samsung Knox Security রিপোর্ট অনুযায়ী) দেখে আমি সবসময় আমার ফোনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি।
পেশাদার সহায়তা এবং সার্ভিসিং
যদি উপরের কোনো টিপস কাজ না করে এবং ফোন নিয়মিত অতিরিক্ত গরম হতে থাকে, তাহলে একজন ভালো মেকানিকের সাহায্য নেওয়া জরুরি। অনেক সময় চার্জিং পোর্ট বা অন্যান্য সার্কিটের সমস্যা থেকেও ফোন গরম হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানই সঠিক সমস্যাটি ধরতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় সমাধান দিতে পারবেন।
글을마치며
প্রিয় পাঠকরা, স্মার্টফোন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এর সঠিক যত্ন না নিলে এটি আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ফোনের অতিরিক্ত গরম হওয়াটা শুধু অসুবিধাজনকই নয়, বরং এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও করে। আমি আশা করি, আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা আপনাদের প্রিয় স্মার্টফোনকে ঠান্ডা রাখার এবং ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর অনেক কার্যকরী উপায় জানতে পেরেছেন। এই সহজ টিপসগুলো মেনে চললে আপনার ফোন যেমন সুস্থ থাকবে, তেমনি আপনিও নিশ্চিন্তে আপনার ডিজিটাল জীবন উপভোগ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, একটু সচেতনতাই আপনার ফোনকে দীর্ঘজীবী করতে পারে!
알아দুমে 쓸মো আছে তথ্য
১. চার্জিংয়ের সময় ফোনের কভার খুলে রাখুন যাতে তাপ সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।
২. ২০% থেকে ৮০% এর মধ্যে ফোন চার্জ রাখার চেষ্টা করুন; সারারাত চার্জে রাখা এড়িয়ে চলুন।
৩. আসল চার্জার ব্যবহার করুন এবং নকল বা নিম্নমানের চার্জার থেকে দূরে থাকুন।
৪. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে বন্ধ রাখুন এবং ভারী গেম খেলার সময় বিরতি নিন।
৫. ফোনের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন এবং ব্যাটারি সেভার মোড ব্যবহার করুন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে
স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এর পেছনের কারণগুলো এবং সমাধানগুলো জানা থাকলে আমরা সহজেই এই সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি। আমার মনে আছে, একবার আমার ফোন এতটাই গরম হয়ে গিয়েছিল যে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার পর সমস্যাটি কেটে গিয়েছিল। আসলে, আমরা অনেক সময় অজান্তেই এমন কিছু ভুল করি যা আমাদের ফোনের ক্ষতি করে। ফাস্ট চার্জিংয়ের সুবিধা নিতে গিয়ে আমরা প্রায়শই ফোনের অতিরিক্ত তাপমাত্রার কথা ভুলে যাই। তবে সঠিক চার্জিং অভ্যাস গড়ে তোলা, যেমন— চার্জের সময় ফোন ব্যবহার না করা, ফোনের কভার খুলে রাখা, এবং এটিকে ঠান্ডা ও শক্ত পৃষ্ঠে রাখা—এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, ব্যাটারি সেভার মোড এবং ডার্ক মোড ব্যবহার করা, অ্যাপস ও সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট রাখা, এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করে রাখা আপনার ফোনের ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং অতিরিক্ত গরম হওয়া কমাতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, আপনার স্মার্টফোনটি আপনার মূল্যবান সঙ্গী, তাই এর যত্নে একটু বাড়তি মনোযোগ দিলে এটি আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো সেবা দেবে। আর যদি দেখেন ফোন অস্বাভাবিকভাবে কাজ করছে, তখন দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: চার্জ দেওয়ার সময় আমার ফোন কেন এত গরম হয়?
উ: এই প্রশ্নটা আমি প্রায়ই শুনি, আর সত্যি বলতে, আমার নিজেরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে! আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, চার্জে দেওয়ার পর ফোনটা একটু উষ্ণ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সেটা হাতের তালুতে বেশ গরম অনুভব হতে শুরু করে, তখন ব্যাপারটা চিন্তার। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, আমরা অনেকেই ফোন চার্জে দিয়ে গেম খেলি বা ভিডিও দেখি, তাই না?
এই সময় ফোন দ্বিগুণ চাপে থাকে – এক তো চার্জিং প্রক্রিয়ায় নিজেই কিছুটা তাপ উৎপন্ন হয়, তার ওপর প্রসেসর অতিরিক্ত কাজ করার ফলে আরও গরম হয়ে ওঠে। আমার এক বন্ধু একবার চার্জে বসিয়ে PUBG খেলছিল, ফোনটা এমন গরম হয়েছিল যে প্রায় হাতে রাখা যাচ্ছিল না!
দ্বিতীয়ত, আপনার চার্জার আর কেবল যদি আসল না হয় বা নিম্নমানের হয়, তাহলে কিন্তু ফোন দ্রুত গরম হতে পারে। বাজারের সস্তা চার্জারগুলো ফোনের জন্য উপযোগী ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পিয়ার সাপ্লাই দিতে পারে না, যার ফলে ফোনকে অতিরিক্ত শক্তি খরচ করতে হয়, আর তার পরিণতি হিসেবে ফোন গরম হয়ে যায়। তৃতীয়ত, ফোনের কভার বা কেস যদি খুব পুরু হয় এবং বায়ু চলাচলে বাধা দেয়, তাহলে ফোন তার নিজের উৎপন্ন তাপ বের করতে পারে না এবং গরম হয়ে যায়। আমি নিজেও দেখেছি, মোটা কভার লাগিয়ে চার্জ দিলে ফোন দ্রুত গরম হয়। আর একটা ব্যাপার, আমরা যখন ফোনকে সরাসরি সূর্যের আলোতে বা অন্য কোনো গরম জায়গায় রেখে চার্জ দিই, তখন বাইরের তাপমাত্রাও ফোনের গরম হওয়ার কারণ হয়। এছাড়া, ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক অ্যাপ চলতে থাকা বা ফোনের সফটওয়্যার আপডেট না থাকলেও এমনটা হতে পারে।
প্র: ফোন অতিরিক্ত গরম হলে কি কোনো ক্ষতি হতে পারে? এর প্রতিকার কী?
উ: হ্যাঁ, অবশ্যই ক্ষতি হতে পারে! আমার নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অতিরিক্ত গরম হওয়াটা ফোনের জন্য মোটেই ভালো নয়। এটা শুধু সাময়িক অস্বস্তি নয়, এর সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব আছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় ব্যাটারির। অতিরিক্ত তাপ ব্যাটারির আয়ু দ্রুত কমিয়ে দেয়। দেখবেন, এক বছর ব্যবহারের পরই ফোন আর আগের মতো চার্জ ধরে রাখতে পারছে না, খুব তাড়াতাড়ি চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটাই কিন্তু অতিরিক্ত গরম হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এছাড়া, ফোনের ভেতরের ইলেকট্রনিক্স পার্টসগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রসেসর, সার্কিট বোর্ড – সবকিছুরই কার্যক্ষমতা কমে যায়। একটা সময় ফোন স্লো হয়ে যায়, হ্যাং করে বা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। আর সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, চরম পরিস্থিতিতে ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে বা এমনকি আগুনও লেগে যেতে পারে!
এমন ঘটনা বিরল হলেও, একেবারেই অসম্ভব নয়। আমার এক পরিচিতের ফোন ব্যাটারি ফুলতে ফুলতে স্ক্রিন উঠে এসেছিল। এর প্রতিকার হিসেবে কিছু সহজ টিপস আমি সবসময় মেনে চলি আর অন্যদেরও বলি। প্রথমত, চার্জ করার সময় ফোনের কভারটা খুলে রাখুন। এটা আমার নিজস্ব টিপস!
এতে ফোন সহজে তাপ ছাড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, আসল চার্জার এবং ক্যাবল ব্যবহার করুন। এটা খুবই জরুরি, আমি সব সময় অরিজিনাল এক্সেসরিজ ব্যবহার করার কথা বলি। তৃতীয়ত, চার্জ করার সময় গেম খেলা বা হেভি অ্যাপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ফোনকে একটু বিশ্রাম দিন। চতুর্থত, সরাসরি সূর্যের আলো বা গরম জায়গার পরিবর্তে ঠান্ডা ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় চার্জ দিন। পঞ্চমত, ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বন্ধ রাখুন এবং সময়ে সময়ে ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করুন। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আপনার ফোনকে অনেক সুরক্ষিত রাখবে।
প্র: ফাস্ট চার্জিং কি ফোনের গরম হওয়ার অন্যতম কারণ? ফাস্ট চার্জিং ব্যবহার করলে কি ব্যাটারির আয়ু কমে যায়?
উ: একদম ঠিক ধরেছেন! ফাস্ট চার্জিং বা দ্রুত চার্জিং এই আধুনিক যুগে আমাদের অনেক সময় বাঁচায়, কিন্তু এই প্রযুক্তি ফোনের গরম হওয়ার একটি বড় কারণ হতে পারে। ফাস্ট চার্জিংয়ের মূল মন্ত্রই হলো, দ্রুত বেশি পরিমাণে শক্তি ব্যাটারিতে প্রবেশ করানো। আর যখন এত দ্রুত শক্তি প্রবেশ করে, তখন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার কারণে ব্যাটারির ভেতরে কিছুটা তাপ উৎপন্ন হয়। এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি, সাধারণ চার্জারের চেয়ে ফাস্ট চার্জার দিয়ে চার্জ দিলে ফোন তুলনামূলকভাবে বেশি উষ্ণ হয়। তবে, বেশিরভাগ আধুনিক স্মার্টফোন এবং ফাস্ট চার্জারগুলিতে অতিরিক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা (যেমন – তাপমাত্রা সেন্সর) থাকে। যখন তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায়, তখন চার্জিং গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যায়। তাই সাধারণত, ফাস্ট চার্জিং ফোনের ব্যাটারির আয়ু তাৎক্ষণিকভাবে খুব বেশি কমিয়ে দেয় না, যদি আপনি আসল চার্জার এবং কেবল ব্যবহার করেন এবং ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট থাকে। তবে, যেকোনো ব্যাটারিরই একটি নির্দিষ্ট চার্জ-ডিসচার্জ সাইকেল থাকে। খুব ঘন ঘন ফাস্ট চার্জিং এবং অতিরিক্ত গরম হওয়া এই সাইকেলকে প্রভাবিত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারির সামগ্রিক আয়ু কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। আমার পরামর্শ হলো, যখন আপনার খুব দ্রুত চার্জ করার প্রয়োজন না হয়, তখন আপনি নরমাল চার্জার ব্যবহার করতে পারেন অথবা ফাস্ট চার্জিংয়ের সময় ফোনের কভার খুলে রাখলে এবং ঠান্ডা পরিবেশে চার্জ দিলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। সবশেষে এটাই বলব, সুবিধার সাথে কিছু সীমাবদ্ধতা আসবেই, তবে সঠিক ব্যবহার এবং সচেতনতা দিয়ে আমরা আমাদের স্মার্টফোনের যত্ন নিতে পারি।






